শয়তানের ঘটনা
এখানে একটি হাদীস বর্ণনা করা হইল এবং এই হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও শয়তানের মাঝে প্রশ্ন-উত্তরের মাধ্যমে যাহা আলোচনা হইয়াছিল তাহাই আলোকপাত করা হইল। আল্লাহ তায়ালা যাহাকে তৌফিক দিবেন সে উহা হইতে উপকৃত হইতে পারিবে এবং কামিয়াবী অর্জন করিতে পারিবে। আর এই উত্তম নসীহতমালা কবুল দুর্ভাগ্য হইতে বাঁচিয়া থাকিয়া দুনিয়া ও আখেরাতে উত্তম চরিত্রশীল পুণ্যবান মানুষ হিসাবে পরিগণিত হইতে পারিবে।
হাদীস
শয়তানের প্রকৃতি: হযরত উরওয়াহ ইবনে যোবায়ের (রাঃ)বর্ণনা করেন যে, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে মদীনা বাকী নামক কবরস্থানের দিকে গমন করিলাম, আমাদের সঙ্গে ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ,আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ও আলী ইবনে আবী তালেব (রাঃ)।।যখন আমরা কবরস্থানের পিছনের দিকে অতিক্রম করিয়া গেলাম,আমরা শুনিতে পাইলাম লোহার শিকলের মত আওয়ায হইতছে।আমরা রাসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করিলাম, ইহা কিসের আওয়ায? উত্তরে তিনি বলিলেন, ইহা সৌন্দর্য্যপূর্ণ অলংকারাদি পরিহিত আল্লাহর দুশমন শয়তানের।হযরত আলী (রাঃ) হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলিলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাহাকে আমাদের সম্মুখে প্রকাশ হইতে বলুন।অতঃপর হযরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শয়তানকে বলিলেন, তুমি প্রকাশ্যে দেখা কর। সঙ্গে সঙ্গে আরো বলিলেন, যদি শয়তান শুধু আলী ইবনে আবু তালেবের জন্য প্রকাশ হয়, তবে সে আজই মারা যাইবে। হাদীস বর্ণনাকারী বলেন, তারপর শয়তান আমাদের সকলের সামনে প্রকাশ হইল। আমরা সকলে তাকে দেখিলাম, সে বাঁকা বৃদ্ধ, কানা এবং তাহার ভাল চক্ষুটি নাকের মত লম্বা আকৃতির। আর তাহার মাথায় সর্বপ্রকার সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ একটি টুপি ছিল এবং তাহার কোমরেও সর্বপ্রকার সৌন্দর্যপূর্ণ অলংকারাদি খোচিত কোমর বন্ধ বাঁধা ছিল ও তাহার হাতে একটি ঘন্টা ছিল। শয়তান হযরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে "আচ্ছালামু আলাইকা ইয়া মুহাম্মদ” সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়া সালাম পেশ করিল। হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহার সালামের উত্তর দেন নাই। আবার শয়তান বলিল, "সালামুল্লাহি আলাইকুম" অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার শান্তি তোমাদের উপর বর্ষিত হোক। দোজাহানের বাদশাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, সালাম আল্লাহর পক্ষ হইতেই, তোমার পক্ষ হইতে নয়, তুমি আল্লাহর দুশমন এবং তোমার নিজের নফসেরও দুশমন। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শয়তানকে বললেন, তোমার মাথার এইরূপ সৌন্দর্যপূর্ণ টুপি কেন? উত্তরে বলিল, হে মুহাম্মদ! এই দুনিয়া আরামের ছাতা, উহাকে দুনিয়া অন্বেষণকারীর অন্তরে সুন্দর করিয়া দেখাই এবং লোভ-লালসাকে বাড়াইয়া দেই। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, তোর মাজায় কোমরবন্ধনী কেন? শয়তান বলিল, ইহা দুনিয়ার কামনা-বাসনা এবং উহা দ্বারা আদম সন্তানের অন্তরের কামনা-বাসনাকে প্রকাশ করিয়া থাকি এতটা যে, তাহার সামনে কামনা-বাসনার যে কোন প্রকার রূপ উপস্থিত হোক না কেন সে তাহা করিয়া বসে। হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, তোর হাতে ঘণ্টা কেন? শয়তান বলিল, যখন দেখিতে পাই দুই ব্যক্তি ঝগড়া করিতেছে, তখন তাহাদের মাঝে ইহা বাজাইতে থাকি, অতঃপর তাহারা সমস্ত খারাপ ও অশ্লীল কাজগুলি করিতে থাকে এবং সমস্ত মিথ্যা কথাগুলি বলিতে থাকে ও মিথ্যা অপবাদ দিতে থাকে।
সুত্রঃ ছারছীনা প্রকাশনীর, শয়তনের ডাইরী
0 komentar: